Monday 27 October 2014

তোমার দান

বাতাসে পূজোর গন্ধ এখনও ভেসে বেড়াচ্ছে।নীল আকাশে বরফ টুকরোর মত মেঘেদের ভেসে থাকা। চলন্ত ট্রেনের জানালা দিয়ে চোখে পড়েছে লাইনের দুধারে কাশ ফুলের বিছানা। সুন্দর দৃশ্য গুলো ক্রমশ সরে যাচ্ছে প্ল্যাটফর্মের জনারণ্যের কোলাহলে।সবাই ব্যস্ত ,সবাই অসহিস্নু হঠাত ট্রেনের থমকে দাঁড়ানোতে। কপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম সিঁদুরের টিপ বেয়ে সরল রেখার আকার নিছে।প্রত্যেকেরই ভ্রু আর কপালের মাঝখানে তিন চারটে ভাঁজ -মুখে বিরক্তির কুঞ্চন অতি স্পষ্ট। স্টেশনের মাইকের ঘোষনা বিরক্তির পারদ বাড়িয়ে দিল আরো দু তিন ধাপ। ......................হঠাত প্ল্যাটফর্মে নেমে দাঁড়িয়ে থাকা সদা ব্যস্ত মানুষ গুলোর ত্রস্ততায় বোঝা গেল ট্রেন সিগন্যাল পেয়েছে।আমাদের মহিলা কামরার মহিলারা বিশেষ করে যারা বসতে পেরেছেন আবার মেতে উঠলেন সংসারের খোশ গল্পে।সন্তানদের নামি দামী স্কুলের আদব কায়দার বিশ্লেসন ,সদ্য পুজোর কে কত বেশী দামের এবং কতবেশী কাপড় আদায় করতে পেরেছেন তার হিসেবে। সঙ্গে অবশ্যই অন্যান্যদের নিন্দা।মহিলা কামরার অন্দরমহলে কি না পাওয়া যায়?আনাজের পসরা থেকে শুরুকরে; মটর,বাদাম,শায়া ব্লাউজ স..ব.. মনটা বিরক্তিতে ভরে উঠছিল।এমন সময় সমস্ত সরবতা নির্লজ্জতা ছাপিয়ে কানে ভেসে এল সুন্দর রিনরিনে সুরেলা গলার আর্তি '''''আঘাত সে যে পরশ তব ,সেইতো পুরস্কার ''সব কলরব ছাপিয়ে সবার চোখ এখন খুঁজছে সেই সুরের কেন্দ্রীয় চরিত্রটিকে।আমার চোখ গিয়ে পড়ল আর দুটো বন্ধ চোখের পাতায়। একটি কিশোরী প্রশান্ত হাসিতে; মুখ ভরিয়ে হাত পেতে রেখেছে সামনের দিকে।'''যখন থাকে অচেতনে এ চিত্ত আমার----------- ------------পুরস্কার।'' .বুঝিনি সে জন্মান্ধ।যখন বুঝলাম তখন অবাধ্য অশ্রু আমার বাধ মানছেনা। সে জানেনা জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ থেকে সে বঞ্চিত। কখন পেরিয়েছে তার ছেলেবেলা,কখন পায়ে পায়ে এসেছে তার কৈশোর ,কিছুই সে জানেনা। এই নির্মলতা পেরিয়ে কখন সে পা দেবে যৌবনের আঙ্গিনায়। বর্ষার নদীর মতই ছাপিয়ে যাবে তার যৌবন।তার অন্ধকারের দুনিয়া কোনো হিসাবই রাখেনা জাগতিক .কালের।মহাকালের কি নির্মম অবিচার।অথচ  কোনো নালিশ তার নেই কারো কাছে।নীরবে সব অবিচার মাথা পেতে নিয়ে ভিখখার ঝুলি এগিয়ে ধরেছে ---আলোর শিশু থেকে বড় হওয়া মানব পুত্রদের দিকে।
                           মানুষের দরবারে বিতরণ করে যাচ্ছে একটি বাণী ---আঘাতই তাঁর পুরস্কার।সমস্ত আঘাতঅভিমান কষ্ট বিরক্তি অতিক্রম করে বুকটা আমার ব্যথায় টনটন করছে।হায়রে;এই নিস্পাপ কিশোরী জানলনা কেমন দেখতে তার গর্ভধারিণী মা কেমন দেখতে তার বাবা?অসীম রহস্যে ভরা এই পৃথিবীর রূপ,রস,বর্ণ কিছুরই সে স্বাদ গ্রহণ করতে পারলনা।তবুও নালিশ নেই তার পরম পুরুষের কাছে।এই নিঠুর আঘাত কে সে পুরস্কার বলে মেনে নিয়েছে।আমার এবার চোখ পড়ল আইলাইনার লাগানো চোখ ,সুন্দর পালিশ করা নখ ,সুসজ্জিতা মহিলাদের দিকে,যারা অনেক অভাব অভিযোগ বিনিময় করতে করতে চলেছেন অসন্তুষ্ট মুখে।আমার নিজের হাতের ভারী ব্যাগটা আরো ভারী লাগছে বিষন্নতায়।ভাবছি নিজের সুস্থ চোখ দুটো লুকোই কোথায়?বালিকা অন্ধ সে আমাকে দেখতে পাচ্ছেনা,কিন্তু আমি যে দেখতে পাচ্ছি তার বাড়িয়ে দেওয়া হাতে কারো দান,একটি অচল টাকা।
                                                                    সে ভাবছে এ তাঁরই দান..মুখ ভর্তি হাসি নিয়ে গেয়ে চলেছে '''আঘাত সে যে পরশ তব সেইতো পুরস্কার '''.কিছুক্ষণ নীরবতার পর আবার ঠেলাঠেলি,নড়াচড়া পরের প্ল্যাটফর্ম এসে গ্যাছে। বাঁচারতাগিদে সে কিশোরী ও চঞ্চল। অন্য কামরায় যেতে হবে তাকে। মুখে তার স্মিত হাসি কন্ঠে সেই গান আর হাতের মুঠোয় অচল পয়সা। .............তাঁরই দান...
...................................................................................................................................................................... ,     

2 comments:

  1. Ki kare tumi aman sundar kare likhte paro baloto?...........amar mane ache, ei ghatana ta tumi sedin bari fire amake, didike ar baba ke bolechile........

    ReplyDelete
  2. chokkher alo e dekhey chillem chokkher bahirey... antarey aaj dekhbo jokhon alo nahi rey!!!

    ReplyDelete